Friday, April 5, 2019

আমার আশপাশের মমতাময়ীরা


আমার আশপাশের মমতাময়ীরা
লিখেছেন ব্লগার চাঁদগাজী 




আইএসসি ১ম পার্ট ফাইনাল শেষ করে, শহর থেকে বাড়ী এলাম সন্ধ্যার দিকে; ফেরার পথে খামারে থেমেছিলাম বুড়োমিয়াকে দেখতে। উনাকে জানালাম, কলেজ ১ মাসের ছুটি দিয়েছে; উনি কাপড় গোছাতে লেগে গেলেন, এখুনি নিজের পরিবারকে দেখতে যাবেন। বুড়োমিয়া চলে গেলেন; এখন থেকে আগামী ১ মাস খামারের সব দায়িত্ব আমার উপর; বৈশাখ মাস, খামারের রজনীগুলো ভয়ানক সুন্দর: তিনদিকে মাঠ, বাতাস বইছে, গভীর রাতে শিয়ালের দল মাঠে শামুক খোঁজে, সোস্যালাইজিং করে; রাতের পাখীরা বের হয়।

পরদিন খুব ভোরে বাড়ী গিয়ে নাস্তা করে খামারে এসে গরু, ছাগলগুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে, পুকুর পাড়ে বসে নজর রাখলাম; ৩টা বলদ খুবই শক্তিশালী, মাঠের অন্য গরুগুলোকে আক্রমণ করে, এগুলোকে চোখে চোখে রাখতে হয়; যাক, আজকে মাঠের এইদিকে কারো গরু আসেনি, ঘাষও প্রচুর। বেলা ১১টার দিকে প্রচন্ড গরমের কারনে গরুগুলো নিজের থেকেই ঘরে ফিরলো, ভালো! আমি পানি খাওয়ায়ে, গামলায় ঘাস দিয়ে ঘরে ঢুকলাম; প্রচন্ড রোদ, অনেক গরম; দুপুরের খাবার খেতে যাবার দরকার; কিন্তু এই রোদে বের হতে ইচ্ছে হলো না। জানালর দিকে মাথা রেখে দৈনিক আজাদী পড়ছি; কখন চোখ লেগে এসেছিলো কে জানে! কার পায়ের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো! কে যেন জানালার এপাশ থেকে আস্তে ওপাশে চলে গেলো, পত্রিকার উপর ছায়ার মতো পড়লো!
-
বাহিরে কে?
-
আমি!
-
ভেতরে আয় ছেমনা।
ছেমনা, আমাদের বাড়ীর উত্তর পাশের ২য় বাড়ীর বদি ভাইয়ের মেয়ে; বয়স ১২/১৩ হবে, বয়সের তুলনায় একটু লম্বা গঠনের, বাবাও লম্বাটে; মায়ের মতো সুন্দরী; আমি স্কুলে থাকতে খামারে আমার জন্য খাবার আনতো সব সময়; কাজটা সে নিজের থেকেই নিয়েছিলো; মাকে এটা সেটায় সাহায্য করতো, আর আমার জন্য খাবার আনতো। গত ১ বছর আমি কলেজে, বাড়ী এলে ব্যস্ত, খামারে গেলেও ছেমনার সাথে আমার সময় মিলে না।

-
কিরে ছেমনা, কেমন আছিস, অনেকদিন তোকে দেখি না!
-
এখন বের হই না; মা বলেছে, আমি বড় হয়ে গেছি!
-
তাই? তুই অবশ্য অনেক লম্বা হয়ে গেছিস!
-
আর কিছু না?
-
তোকে অনেক সুন্দর লাগছে!

-
মাঠ থেকে ছাগল নিতে এসেছিলাম, দেখি তুমি খামারে। তোমাকে দেখতে এলাম; তুমি খেয়েছ?
-
না, এই গরমে যেতে চাচ্ছি না।
-
বরাবরের মতোই অলস তুমি; আমি নিয়ে আসবো!
-
এখন থাক, এই রোদে খাবার আনার দরকার নেই, তুই অসুস্হ হয়ে যাবি।
-
আসার সময় দেখলাম, পুকুরের উত্তর পাড়ে ২ গাছে কলা পেকে আছে, পাখী অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছে। দা আছে ঘরে?
-
বুড়ামিয়ার ঘরে দেখ।

ছেমনা হাতে দা নিয়ে কলা কেটে আনতে চলে গেলো; পুকুরের উত্তর পাড়টায় দুনিয়ার সাপের বাসা। আমি দৌড় দিয়ে বের হলাম; সে প্রায় উত্তর পাড়ের কাছে; আমি চীৎকার দিয়ে বললাম,
-
ছেমনা থাম, আমি আসছি; ওখানে অনেক সাপ।

আমি লাঠি হাতে গিয়ে প্রথমে উঠলাম; কলা অনেক আগেই পেকেছে, বুড়োমিয়া টের পায়নি; ২ জনে মিলে ২ ছড়া কলা ঘরে আনলাম।
দু'জনে বসে খাচ্ছি; আমি ২/৩টা খাাওয়ার সময়, ছেমনা ৪/৫টা খেয়ে ফেললো।
-
কিরে, তুই এত কলা কিভাবে খাচ্ছিস? পেটে ব্যথা করবে।
-
আমি সকাল থেকে কিছু খাইনি; আসলে, কাল রাতেও খাইনি।
-
ঘরে কিছু নেই?
-
না, আব্বার অসুখ আজ ৪/৫ দিন, কাজকর্ম নেই।
-
আমাদের ঘরে যাস নাই কেন?
-
এখন শরম লাগে, বড় হয়ে গেছি।
-
তুই আবার কিসের বড় হলি! ছাতা নিয়ে যা, খাবার নিয়ে আয়; মাকে বলিস মেহমান আছে ১ জন।

ছেমনা ২ জনের খাবার এনেছে; আমার ক্ষুধা নেই, কলা খেয়ে ক্ষুধা চলে গেছে। ছেমনা বললো,
-
তোমার মেহমান কই?
-
মেহমান তুই!
ছেমনা অদ্ভুত করে হাসলো।
-
তুই খেয়ে নেয়, বাকীটুকু তোর বাবার জন্য নিয়ে যা; কলা খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে, কলাও নিয়ে যা।
-
আমিও খেতে পারবো না; কলা বেশী খাওয়াতে পেট ভারী লাগছে; সবটুকু নিয়ে যাই, আব্বা ও আম্মা খাবে।
-
বেলা ডুবার আগে আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসিস; মাকে বলিস, মেহমান থাকবে একজন।





No comments:

Post a Comment

কোন এক রাতবিহারিনীকে

কোন এক রাতবিহারিনীকে (আহমেদ জী এস এর কবিতা)  হায় রে , ফুলি ! কেন পথে নেমে এলি, এ কোন সন্ধ্যাবেলা  চোখে বিষাদের হলুদ কাজল মেখে ...

জ্ঞান কি .... জ্ঞানী কে