Thursday, April 11, 2019

কোন এক রাতবিহারিনীকে


কোন এক রাতবিহারিনীকে
(আহমেদ জী এস এর কবিতা) 

হায় রে , ফুলি !

কেন পথে নেমে এলি, এ কোন সন্ধ্যাবেলা 
চোখে বিষাদের হলুদ কাজল মেখে 
দুঃখের মলিন গাত্রাবাস খুলে রেখে 
নিশীথে চড়ালি গতরে সুবাস নির্জলা ! 

কাকে দেখাবি বিগতা শরীরের এ ঢেউ 
কার বাহু বিস্তারে আয়াসে দিবি ধরা 
বুকের গহীন কন্দরে এতো যে খরা 
তারে কি কখনো দুহাতে তুলে নেবে কেউ ? 

কেন সঁপে দিলি প্রকাশ্যে জীবন যৌবন, 
আজন্ম আদরিনী মাটিগন্ধ খসালি 
পিষ্ঠ স্তনে ভিন দেশী আঘ্রান মাখালি 
চোখজল ঠেলে রেখে কাটালি আজীবন 

ব্যাধিগ্রস্থ পিশাচের দঙ্গলেরই ভীড়ে 
আজো খুঁজিস দুখি মুখখানি পিতার ?  
ভায়ের আদল, শতছিন্ন সংসার ?  
জানি , এই ক্লেদ-নগর নিছে সব কেড়ে ।   


ভুলেছিস কি , পুকুরের সেই শান্ত জল 
কাঁধের চকিত দর্প , অকারন হাসি 
কৈশোরের নির্ঝরিনী ঝরা সর্বনাশী 
গতরের মূর্ছায় কাঁপা ফুল, কী দোদুল  ?  

মনে পড়ে , সুগন্ধা নদীর ঢেউ উত্তাল 
বিবসনা নারকেল ছায়ার দুপুর, 
পুঁইয়ের বীচি রাঙা পায়ের নুপূর 
কলশব্দে হেসে ওঠা ঐ মাটির ফাটল ? 

এখানে নরকের ক্ষুধা দাউদাউ জ্বলে  
কুকুর কুন্ডলী সহবাসে রাতভর, 
দেহ ছেনে আনিস মুখের আহার  
কি কুক্ষনে, এই বুঝি ছিলো তোর কপালে ?

হায় রে , ফুলি !
শুধু তোরেই বলি-

নামুক ঘুম, শান্তি তোর গহীন শয়নে  
শান্তি,  মনের গভীরে । অচেনা প্রহরে      
জেগেছিস  নির্ঘুম রাত ,  এই শহরে  
ভালো থাকিস সব ভুলে আপন ভুবনে । 


Friday, April 5, 2019

সাদা আর কালো মরুভুমি 
লিখেছেন  ব্লগার জুন 
[ প্রথম পর্ব ]
সাদা মরুভুমিতে এক অপুর্ব সৃস্টি চুনা পাথরের মাশরুম

আচ্ছা মরুভুমি কি কখনো সুন্দর হয় বলুনতো !
এ প্রশ্নটা অনেকের মত আমারও মনে ছিল সবসময়।
যদিও মরুভুমি আমি আগেই দেখেছি ভারতের জয়সলমীরে, মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে, কই ভালো তো লাগেনি তাকে একটুকুও।
কি তার রুক্ষ শুস্ক প্রকৃতি, আগুনের হল্‌কার মত বাতাস নামের এক ভয়ংকরের স্পর্শ।এক নি:শ্বাসে শরীরের সমস্ত আদ্রতা যেন শুষে নিচ্ছে আমার। শরীরের চামড়া এমন কেন ! পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এটা কি আমি !
এমনই এক অনুভুতি হয়েছিল আমার।
লু হাওয়ার সাথে ধুলো উড়ে চোখমুখ ভরে যাচ্ছে, কিচ কিচ করছে সব কিছু।
প্রচন্ড গরম, ভালোলাগার কি থাকতে পারে এখানে ! কিন্ত পশ্চিম মিশরের হোয়াইট ডেজার্টে এসে আমি কেমন অভিভুত হয়ে গেলাম এও কি সত্যি।অপার্থিব সৌন্দর্যের এই রূপ কি কখনো মরুভুমির হয়ে থাকে! চমকে গিয়েছিলাম আমি তার পর যখন শুনলাম তাও আবার সাদা কালো !

মিশরে পৌছানোর পর ট্যুর অপারেটর যখন বার বার বাহারিয়া ডেজার্ট সাফারীর কথা বলছিল তখন আমার পুরোনো অভিজ্ঞতার পুঁজি নিয়ে আমি কিন্ত কিন্ত করছিলাম। এখন মনে হয় আমি যদি আবার কখনো মিশরে যাই তবে শুধু এই বাহারিয়া ডেজার্ট সাফারীতেই যাবো।
ভোরবেলা রওনা হোলাম কায়রো থেকে ৩৬০ কিমি দুরত্বে ফারাফ্রা আর বাহারিয়া মরুদ্যানের মধ্যে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে অবস্হিত সাদা মরুর উদ্দেশে। পাঁচ ঘন্টা লাগবে বাসে যেতে বাহারিয়া মরুদ্যানে। আজ যাবো, মরুর বুকে রাত্রিবাস করে কাল বিকেলে ফিরে আসবো।
আড়াই ঘন্টার মত চলেছি। বাইরে প্রচন্ড গরম।শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসও বিন্দুমাত্র তাপমাত্রার কোনো হেরফের করতে পারছেনা। একবার পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছি একবার হীম শীতল ফান্টার বোতলে চুমুক কিন্ত তৃষ্ঞা মেটার কোনো লক্ষনই নেই।তারপরও ঝিমুনি কাটানোর জন্য ভীষন চা খেতে ইচ্ছে করছে। ভাবতেই হঠাৎ করে আলাদীনের চেরাগের মত সামনেই দেখি একটি ছোট্ট ফুড কোর্টের সামনে আমাদের যাত্রা বিরতি।
দুপুর বারোটার সময় বাহারিয়া মরুদ্যান শহরে পৌছালাম। মরুদ্যান হলে কি হবে ছাড়া ছাড়া কিছু খেজুর আর ঝাউ টাইপের গাছ আর তেমনি প্রচন্ড খরতাপ। এলোমেলো বাড়ীগুলো মনে হয় ধুলোয় ঢাকা মলিন চেহারা। দারিদ্রতার ছাপ সর্বত্র।

যাক এসব কথা। ট্যুরের কথায় আসি।
আমাদের সাফারী ট্যুরের আয়োজক ছিল মিশরের বিখ্যাত আহমেদ সাফারী ক্যাম্প। বাস থেকে নামতেই তাদের জীপ সাথে সাথে আমাদের পৌছে দিল তাদের বিখ্যাত আহমেদ সাফারী হোটেলে । আমরা ষোলোজন পর্যটক ছিলাম। তার মধ্যে আমেরিকান, কলম্বিয়ান, জার্মান, জাপানিজ, ইজিপশিয়ান আমেরিকান আর আমরা দুজন।
সেদিন ছিল শুক্রবার। সেখানে সবাই সুন্নি মুসলমান। আমাদের এজেন্ট, গাইড, ড্রাইভার সবাই জুমার নামাজ পড়ে আসলো।হোটেলে খেলাম রুটি পনির, কাবাব, টুনা ফিস শসার সালাদ আর কি সব চিনলাম না।মনের মত খাবার পরিবেশন করতে না পারায় তারা বেশ দু:খ প্রকাশ করতে লাগলো।
খাবার শেষে আমি হোটেলটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম।আধুনিক এবং ঐতিহ্য এই দুটোর সংমিশ্রনে তৈরী হোটেলটায় পাথর আর খেজুর গাছের কান্ড ব্যাবহার করা হয়েছে।মোটা পাথরে তৈরী বলে ভেতরটা তুলনামুলক ভাবে বেশ ঠান্ডা। পাথরের বেন্চ দেয়ালে খোদাই করা তাতে পাতলা কার্পেট জাতীয় দড়ি বিছানো, সেই ঠান্ডা আরামদায়ক পাথরের বেন্চে বসে রইলাম কিছুক্ষন এর মধ্যে জীপের ছাদে মাল পত্র উঠানোর কাজ চলছে। রাতের খাবার এবং সকালের নাস্তা পরিবেশন করার দায়িত্ব তাদের।
                                       
                                                       আহমেদ সাফারী ক্যাম্প হোটেল।


এজেন্ট মাহমুদ এসে জানালো আমরা প্রত্যেকে যেন কমপক্ষে দুই লিটারের দুই বোতল পানি সাথে নেই। কায়রো থেকে পাচ ঘন্টা ধরে আসতেই ছয় লিটার পানি আর দুই লিটার ফান্টা শেষ। আবারো চার লিটার পানি আর দুই লিটার ফান্টা কিনলাম। ফান্টা আমি খুব কম খাই কিন্ত টক স্বাদের জন্য ওটা আমি ওখানে খুব খেতাম, ভালোলাগতো। আমরা আরো জানতে পারলাম তারা আমাদের প্রথমে ব্ল্যাক ডেজার্ট এবং সেখান থেকে হোয়াইট ডেজার্টে নিয়ে যাবে।
আর ওখানেই রাতে থাকার জন্য ক্যাম্প করবে।
ঠিক তিনটায় চারটা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারে করে তাবু, কম্বল পানি, পেট্রোল ক্যাম্প ফায়ারের জন্য কাঠ আর খাবার দাবার হাড়ি পাতিল চুলা মোট কথা যা যা দরকার সব কিছু নিয়ে রওনা দিলাম দুশ দশ কিলোমিটার দুরে সেই ভয়ংকরের উদ্দেশ্যে।
আমাদের গাইড কাম ড্রাইভার আহমাদ একশ চল্লিশ কিলোমটার বেগে সেই মরুর বুক চিরে বয়ে যাওয়া সোজা রানওয়ের মত মসৃন রাস্তা দিয়ে ছুটে চল্লো গন্তব্যের উদ্দশ্যে।

                                     
                                                      ব্ল্যাক ডেজার্টে ব্ল্যাক হিল

আঠাশে সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটায় ঢাকা থেকে কুয়েত এয়ারলাইন্সের
এ ৩০০-৬০০/৬০০সি এয়ার বাস কখনোও একত্রিশ হাজার থেকে ছত্রিশ হাজার ফিট উচ্চতায় ভেসে ভেসে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে কায়রোর উদ্দ্যেশ্যে। বিজনেস ক্লাসের জানালা দিয়ে চেয়ে আছি আমি নীচের দিকে।ঢাকা থেকে যখন উড়াল দিয়েছিলাম তখন ছিল মেঘের খেলা। আর চার ঘন্টা ট্রানজিট শেষে কুয়েত সিটি থেকে যখন রওনা দিলাম তখন চেয়ে দেখি ঝক ঝকে আকাশ নীচে আদিগন্ত বিস্তৃত মরুভুমি আর মাঝে মাঝে পাহাড়ের সারি।আমি অবশ্য একটু কনফিউজড ছিলাম ওগুলো কি! কিন্ত আমার ভুগোলবিশারদ স্বামী জানালো ওগুলো মরুভুমি আর পাহাড়ই।

                                      
                                                           ধু ধু সেই উষর মরুপ্রান্তর

সেই মরুর মাঝে দেখলাম চিকন ফিতার মতন একদম সোজা এক কালো রেখা মাইলের পর মাইল অতিক্রম করে মিশে গেছে দিগন্ত রেখায়, কখনও বা একশ চল্লিশ বা একশ পয়তাল্লিশ ডিগ্রী বাঁক নিয়ে।আমার স্বামী জানালো ওটা রাস্তা! আমি অবাক হয়ে গেলাম এত সোজা কোনো আকাবাকা নেই!
ও বল্লো বাঁকা করার প্রয়োজন তো নেই এখানে।
এত বাহুল্য কথা বল্লাম একারনেই যে এমন একটি চকচকে সোজা মসৃন রাস্তা দিয়ে আমরা যাচ্ছি সেই গন্তব্যে যা কিনা আড়াইশো কিমি তে গিয়ে শেষ হবে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জীপ, একশ চল্লিশের নীচে নামছেই না কাটা। এরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত দক্ষ ড্রাইভার। এদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী হাসি খুশী যে বাচ্চা চালকটি তার নাম মুহাম্মাদ হামাদ।
এখানে প্রসংগত একটা কথা বলি তাহলো ওখানে যত লোকের সাথে পরিচয় হয়েছিল তাদের নাম হয় আহম্মেদ নয় মুহাম্মদ। শুধু এক টাংগাওয়ালার টাংগা যেটা আমি একটু চালিয়েছিলাম লুক্সরে তার নাম আবু কারিম! জীপ চলছে সেই ফিতার মতন সোজা রাস্তায়। দুপুর তিনটা বাজে প্রচন্ড গরমে দম আটকে আসছে ।এসি তে ঠান্ডা না হওয়ায় গাড়ীর জানালাটা একটু খুলে দিয়েছি। হু হু করে বাতাস ঢুকছে। মুহুর্তে মুহুর্তে সবাই পানির বোতলে মুখ দিচ্ছে।ঠান্ডা পানির বোতলটা এমন গরম হয়েছে মনে হচ্ছে এখন চা পাতা দিলে চা বানানো যাবে।
                                                             

   
জীপের জানালার ফাক দিয়ে তোলা ছবি 
        আমাদের জীপে আমরা ছাড়াও দুজন ইজিপশিয়ান আমেরিকান আর দুজন খাঁটি মার্কিন মেয়ে ছিল আঠারো থেকে বিশের কোঠায় বয়স।ওরা চারজন বন্ধু। ঐ চারজনের মধ্যে একটাই ছেলে তার নাম ওমার।সে সামনের সিটে বসে অনর্গল আরবী ভাষায় কথা বলছে আহমাদের সাথে।বাকি তিনটা মেয়ে আমাদের পেছনের সীটে। মিশরে সাধারন মানুষের মধ্যে ইংরেজী ভাষার চল বেশ কম তবে ট্যুরিজমের সাথে যারা জড়িত তারা মোটামুটি কাজ চালানোর মত ইংরাজী জানে। গাইড কাম ড্রাইভার মাঝে মাঝে আমাদের সাথেও কথা বলছে সেই ঝড়ের বেগে গাড়ী চালানোর ফাকে ফাকে।
                                                                            

  
                                                              কালো মরুভুমি                                                          
ডানে বায়ে চেয়ে দেখছি হলুদ মরুভুমি কালচে হয়ে আসছে। ছোটো ছোটো টিলার মতন দেখতে অনেকটা আগ্নেয়গিরির মত লাগছে।জানলাম এটাই ব্ল্যাক ডেজার্ট। মাইলের পর মাইল এরকম দৃশ্য।
হটাৎ রাস্তা ছেড়ে ডান দিকে এক বাঁক নিয়ে মরুভুমির দিয়ে চলতে শুরু করলো জীপগুলো। উচু নীচু খানা খ্ন্দক আর পাথরের টুকরোর উপর দিয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে কোনো কার র‌্যালীর আমরা অংশগ্রহনকারী।
                                                                                

  
রাস্তা ছেড়ে কালো মরুভুমিতে প্রবেশ

কিছুদুর এভাবে চলার পর এক জায়গায় চারটি জীপই থামলো। নেমে দেখলাম
মরুভুমির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হলুদ পাথরের টিলার উপর কয়লার চেয়েও অত্যন্ত কঠিন কালো পাথরের ছোটো ছোটো টুকরোয় আবৃত চারিদিক।জানতে পারলাম সেগুলো ব্যাসল্ট আর গ্রানাইট সাথে কয়লার টুকরো ও আছে । কিন্ত পাথরগুলো আলগা হয়ে বিছিয়ে আছে।
কালো যে কত সুন্দর হতে পারে সেটাই দেখছি মনপ্রান ভরে। খুব সুন্দর সেই দৃশ্য সবাই ছবি তুলতে লাগলো। টিলা বেয়ে উঠা নামা সবই চল্লো। বাহারিয়া থেকে ৫০ কিমি দুরত্বে এই অত্যাশ্চর্য কালো মরুভুমির শুরু।
জার্মানদের মধ্যে একজন ছিল তরুন ধর্মান্তরিত মুসলমান।সে ওখানে তৈয়াম্মুম করে নামাজ আদায় করলো। এখানে অনেক গুলো ছবি তোলার কারনে আমাদের ক্যামেরার ব্যটারী কমে এসেছিল যার ফলে পরে প্রচন্ড অনুশোচনায় ভুগেছিলাম। যাক বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে সেখানে আবার রওনা দিলাম। বিকাল হয়ে আসছে খরতাপটা কমে আসছে।
                                                                            

  

সুর্য অস্তাচলে

কালো মরুভুমি শেষ হয়ে এখন এক হলুদ মরুতে প্রবেশ ঘটলো আমাদের। দু জায়গায় চেক পয়েন্ট অতিক্রম করতে হলোকর্তৃপক্ষকে বাহারিয়া থেকে পারমিশন আনতে হয় এখানে প্রবেশের জন্য । কিছুক্ষন পর রাস্তা ছেড়ে অদুরেই যেখানে গাড়ী থামলো তার নাম কৃস্টাল মাউন্টেন।
                                                                              

 

ক্রিস্টালে পরিনত হওয়া পাহাড় 

এখানে পাহাড়ের কিছু অংশ প্রচন্ড সুর্যের তাপে কৃস্টালে পরিনত হয়েছে।বেশ কস্টই হলো বেয়ে উঠতে খাড়া টিলাটায়।
এখনও অবশ্য সুর্য অস্ত যায়নি।একটা জীপের চাকার সমস্যা দেখা দেয়ায় চাকা বদলানো হলো।মিশেলিন কোম্পানির চাকা, যে কোম্পানী ফরমুলা ওয়ান রেসিং স্পন্সর করে ব্রীজস্টোনের সাথে।
আবার রওনা হোলাম এবার আমাদের গন্তব্য পিচ্চি একটা মরুদ্যান তারপর সেই স্বপ্নের তুষার মরুভুমি।

চলবে...। দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত .....



আমার আশপাশের মমতাময়ীরা


আমার আশপাশের মমতাময়ীরা
লিখেছেন ব্লগার চাঁদগাজী 




আইএসসি ১ম পার্ট ফাইনাল শেষ করে, শহর থেকে বাড়ী এলাম সন্ধ্যার দিকে; ফেরার পথে খামারে থেমেছিলাম বুড়োমিয়াকে দেখতে। উনাকে জানালাম, কলেজ ১ মাসের ছুটি দিয়েছে; উনি কাপড় গোছাতে লেগে গেলেন, এখুনি নিজের পরিবারকে দেখতে যাবেন। বুড়োমিয়া চলে গেলেন; এখন থেকে আগামী ১ মাস খামারের সব দায়িত্ব আমার উপর; বৈশাখ মাস, খামারের রজনীগুলো ভয়ানক সুন্দর: তিনদিকে মাঠ, বাতাস বইছে, গভীর রাতে শিয়ালের দল মাঠে শামুক খোঁজে, সোস্যালাইজিং করে; রাতের পাখীরা বের হয়।

পরদিন খুব ভোরে বাড়ী গিয়ে নাস্তা করে খামারে এসে গরু, ছাগলগুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে, পুকুর পাড়ে বসে নজর রাখলাম; ৩টা বলদ খুবই শক্তিশালী, মাঠের অন্য গরুগুলোকে আক্রমণ করে, এগুলোকে চোখে চোখে রাখতে হয়; যাক, আজকে মাঠের এইদিকে কারো গরু আসেনি, ঘাষও প্রচুর। বেলা ১১টার দিকে প্রচন্ড গরমের কারনে গরুগুলো নিজের থেকেই ঘরে ফিরলো, ভালো! আমি পানি খাওয়ায়ে, গামলায় ঘাস দিয়ে ঘরে ঢুকলাম; প্রচন্ড রোদ, অনেক গরম; দুপুরের খাবার খেতে যাবার দরকার; কিন্তু এই রোদে বের হতে ইচ্ছে হলো না। জানালর দিকে মাথা রেখে দৈনিক আজাদী পড়ছি; কখন চোখ লেগে এসেছিলো কে জানে! কার পায়ের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো! কে যেন জানালার এপাশ থেকে আস্তে ওপাশে চলে গেলো, পত্রিকার উপর ছায়ার মতো পড়লো!
-
বাহিরে কে?
-
আমি!
-
ভেতরে আয় ছেমনা।
ছেমনা, আমাদের বাড়ীর উত্তর পাশের ২য় বাড়ীর বদি ভাইয়ের মেয়ে; বয়স ১২/১৩ হবে, বয়সের তুলনায় একটু লম্বা গঠনের, বাবাও লম্বাটে; মায়ের মতো সুন্দরী; আমি স্কুলে থাকতে খামারে আমার জন্য খাবার আনতো সব সময়; কাজটা সে নিজের থেকেই নিয়েছিলো; মাকে এটা সেটায় সাহায্য করতো, আর আমার জন্য খাবার আনতো। গত ১ বছর আমি কলেজে, বাড়ী এলে ব্যস্ত, খামারে গেলেও ছেমনার সাথে আমার সময় মিলে না।

-
কিরে ছেমনা, কেমন আছিস, অনেকদিন তোকে দেখি না!
-
এখন বের হই না; মা বলেছে, আমি বড় হয়ে গেছি!
-
তাই? তুই অবশ্য অনেক লম্বা হয়ে গেছিস!
-
আর কিছু না?
-
তোকে অনেক সুন্দর লাগছে!

-
মাঠ থেকে ছাগল নিতে এসেছিলাম, দেখি তুমি খামারে। তোমাকে দেখতে এলাম; তুমি খেয়েছ?
-
না, এই গরমে যেতে চাচ্ছি না।
-
বরাবরের মতোই অলস তুমি; আমি নিয়ে আসবো!
-
এখন থাক, এই রোদে খাবার আনার দরকার নেই, তুই অসুস্হ হয়ে যাবি।
-
আসার সময় দেখলাম, পুকুরের উত্তর পাড়ে ২ গাছে কলা পেকে আছে, পাখী অনেকগুলো খেয়ে ফেলেছে। দা আছে ঘরে?
-
বুড়ামিয়ার ঘরে দেখ।

ছেমনা হাতে দা নিয়ে কলা কেটে আনতে চলে গেলো; পুকুরের উত্তর পাড়টায় দুনিয়ার সাপের বাসা। আমি দৌড় দিয়ে বের হলাম; সে প্রায় উত্তর পাড়ের কাছে; আমি চীৎকার দিয়ে বললাম,
-
ছেমনা থাম, আমি আসছি; ওখানে অনেক সাপ।

আমি লাঠি হাতে গিয়ে প্রথমে উঠলাম; কলা অনেক আগেই পেকেছে, বুড়োমিয়া টের পায়নি; ২ জনে মিলে ২ ছড়া কলা ঘরে আনলাম।
দু'জনে বসে খাচ্ছি; আমি ২/৩টা খাাওয়ার সময়, ছেমনা ৪/৫টা খেয়ে ফেললো।
-
কিরে, তুই এত কলা কিভাবে খাচ্ছিস? পেটে ব্যথা করবে।
-
আমি সকাল থেকে কিছু খাইনি; আসলে, কাল রাতেও খাইনি।
-
ঘরে কিছু নেই?
-
না, আব্বার অসুখ আজ ৪/৫ দিন, কাজকর্ম নেই।
-
আমাদের ঘরে যাস নাই কেন?
-
এখন শরম লাগে, বড় হয়ে গেছি।
-
তুই আবার কিসের বড় হলি! ছাতা নিয়ে যা, খাবার নিয়ে আয়; মাকে বলিস মেহমান আছে ১ জন।

ছেমনা ২ জনের খাবার এনেছে; আমার ক্ষুধা নেই, কলা খেয়ে ক্ষুধা চলে গেছে। ছেমনা বললো,
-
তোমার মেহমান কই?
-
মেহমান তুই!
ছেমনা অদ্ভুত করে হাসলো।
-
তুই খেয়ে নেয়, বাকীটুকু তোর বাবার জন্য নিয়ে যা; কলা খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে, কলাও নিয়ে যা।
-
আমিও খেতে পারবো না; কলা বেশী খাওয়াতে পেট ভারী লাগছে; সবটুকু নিয়ে যাই, আব্বা ও আম্মা খাবে।
-
বেলা ডুবার আগে আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসিস; মাকে বলিস, মেহমান থাকবে একজন।





Tuesday, April 2, 2019


কি কথা তাহার সাথে ...... 
[ একটি অধরা মিষ্টি প্রেমের গল্প ]



রজনীগন্ধা,


কাল রাতে অতো মধুর আলাপের পরে সেই যে গেলেন, তারপরে আড়মোড়া ভেঙ্গেছে কি আপনার ?
আজকে সকালেই আমি আপনার শহরটিকে ছেড়ে যাচ্ছি, একথা তো আপনাকে আমি বলেছি তাইনা? এখোন ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বাইরে চোখ ফেলতেই দেখি, রেলপথের  ঢালুতে ঝোপঝাড়ে নাম না জানা রঙিন ফুল । বসন্তের শেষ বলেই হয়তো, অন্য সময় চোখে পড়েনা । তখোনই আপনার কথা আবার মনে হলো । নাম না জানা এক ফুল । নাহ.. ঠিক হলোনা মনে হয়

আপনার নাম তো আমার জানাই আছে, আপনার আসল নামটি । কিন্তু এই চিঠির সম্বোধনে আমি 
 আপনাকে ডেকেছি একটা ফুলের নামে । ফুলের নামে নাম দিয়েছি আপনার । আপনাকে দেখার কদিন  পরেই, মনে মনে । আপনাকে দেয়া এ নামটি আপনি হয়তো কোনদিনও জানবেন না । কেন ? চিঠি  আজকাল আর কে-ই বা লেখে ! এই ইলেক্ট্রনিক্স যুগে যন্ত্রে তোলা শব্দগুলো আজ আর হাতের লেখার উষ্ণতা নিয়ে কারো কাছে যায়না । নীল খামে আকাশ ভরা গন্ধ আজ আর কেউ খোঁজেও না । নীল চিঠির দোদুল হাওয়ায় দোলে শুধু কবিতা লেখা কিছু বোকা পুরুষেরা । তাই এটার ভাগ্যেও আপনার হাতের ছোঁয়া পাওয়া আর হয়ে উঠবেনা। এ চিঠিটি আপনাকে হয়তো আমার পোষ্ট করাই হবেনা কখোনও, বুঝলেন ?

আলভী সাহেব যখোন আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিদায়ী হাত নাড়ছিলেন তখোন আমার কান অপেক্ষা করছিলো মুঠোফোনের একটি ঝংকারের জন্যে । তাই শুরুতেই জানতে চেয়েছি, আড়মোড়া ভাঙলো কিনা আপনার । কি জানি ভেঙেছে কিনা ! একটি ঝংকার যে এখোনও বেজে ওঠেনি, ধরে নিতেই পারি; ঘুমুচ্ছেন । আবার এ ও হতে পারে , আমার কথা মনেই পড়েনি আপনার । এই শেষেরটা হলে আমার কি দুঃখ পাওয়া উচিত ? নিজের কাছেই প্রশ্নটি কঠিন বটে । জবাবটি পেতে হলে আপনার সাথে গত মাসগুলোর কড়চা খতিয়ে দেখতে হবে যে !

সেদিন চায়ের কাপখানি তুলে দিতে আপনার হাত আতিথেয়তার সৌজন্যে আমার হাতের উপর যেটুকু প্রহর থাকার কথা , তার চেয়ে কয়েক পলক বেশী ছিলো । হয়তো আপনার দিক থেকে কিছু না ভেবেই ওটা হয়ে গেছে । কিন্তু আপনার হাতটি যে একটু কেঁপে উঠেছিলো ! সে কাঁপন আমাকেও যে ধরেছিলো একটু বেশী করে, তা কি করে অস্বীকার করি ? কোনও কোমল হাতের স্পর্শ যে আমি কখোনও পাইনি তা তো নয় । ঢের পেয়েছি । কিন্তু সেদিন আমার ওমোন হলো কেন ? আপনি উঠে চলে গেলেন আপনার মরালী গ্রীবাটি খানিকটা দুলিয়ে । হলদেটে নরম জমিনে জোনাকির মতো ঘাম চিকচিক করছিলো যেখানে । সে কারনে কী ?

কবিতার আসরে আলভী সাহেবের নেমন্তন্ন পেয়ে প্রায় তিনশো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রথমবার যখোন আপনার শহরে এসেছিলুম তখোন রাত দশটা পেড়িয়ে গেছে । রাতের খাবারের জন্যে আলভী সাহেবের জোরাজুরিতে তার বাসাতে না গিয়ে পারা গেলোনা । সেখানেই তো আপনাকে আমি প্রথম দেখলুম । নাকি আপনি আমাকে দেখলেন ?
পরে অবশ্য এর উত্তরটা পেয়েছি । আপনি আমাকে অনেক অনেক দিন পরে দেখলেন । আমিও আপনাকে । প্রথমদিনে আপনাকে তাই কেমন যেন চেনা চেনা মনে হয়েছিলো । অমায়িক , অসংকোচ এক নেমন্তন্নকারীর স্ত্রীকে প্রথম দর্শনেই কোথায় যেন দেখেছি , এমোন জিজ্ঞাসা শোভন নয় বলেই করিনি সেদিন । আলভী সাহেব আপনাকে ডাকছিলেন মিনু নাম ধরে । আপনার এ নামটি আমার জানা ছিলোনা । তাই নাম মিলিয়ে চিনে নিতে দেরী হয়েছিলো । সেদিনও ফিরে আসার আগে এককাপ চা আপনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন । আপনার হাতখানি সেদিন আমার হাত ছুঁয়ে যায়নি যা গিয়েছিলো তৃতীয় বারে । কবিতার আসর শেষে ফিরে আসার দিনও আবার আলভী সাহেব নিয়ে গিয়েছিলেন আপনার ওখানে বিদায়ী ভোজের জন্যে । সাথে অবশ্য কবিতা সংঘের আরো কয়েকজন ছিলেন । আপনার সান্নিধ্য ভাগ হয়ে গিয়েছিলো সবার মাঝে । সে রাতে লালা ঝরানো খাবার বাদে যেটুকু বাড়তি জুটেছিলো আমার ভাগ্যে , তা আপনার বঙ্কিম চাহনী । সে চাহনী হঠাৎ হঠাৎ থমকে যাচ্ছিলো আমার মুখে । মনে হচ্ছিলো কিছু একটা খুঁজছেন । ভাবছেন, কি করে এটুকু জানলুম ? জেনেছি , কারন আমিও যে কিছু খুঁজছিলুম আপনার মুখে, চোখে ।
আমার নামটি আপনি জেনে থাকবেন আলভী সাহেবের কাছ থেকে । আপনার শহরের কবিতা সংঘের ত্রৈমাসিক অনুষ্ঠানের মধ্যমনি , মানে প্রধান অতিথি হয়ে যিনি আসছেন সে সংঘের সভাপতি পত্নীর তা না জানার কথা নয় । তাই আমাকে একেবারে না চেনার কথা নয় । শুধু আপনার নামটি আমার জানা হয়নি প্রথম দেখাতে । পরে ফিরে আসার পথে আপনার মুখখানি মেলাতে চেয়েছি স্মৃতির ফিকে হয়ে আসা মুখগুলোর সাথে । মেলাতে তেমোন কষ্ট হয়নি । কিন্তু অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে বলে সন্দেহটাকেও কষ্ট করে সরাতে পারিনি । সেদিন যেন পানির গভীরে থাকা শৈবালের গা ছুঁয়ে উঠে আসা একটি ছোট্ট বুঁদবুঁদের মতো আপনি ভেসে উঠলেন স্মৃতির পুকুরে । তাহসিনা তাবাসসুম ? ভার্সিটির একই বিভাগে দুবছরের জুনিয়র ? একটা চিরকূট পাঠিয়েছিলেন যিনি আমাকে একদিন ? যেখানে লেখা ছিলো
তাবাসসুম যে আপনার কথা খুব মনে করে, তা কি জানেন ?

আজ স্বীকার করছি, আমি জানতুম । খুব ভালো করেই জানতুম । কিন্তু আপনাকে তা জানতে দিইনি । আমি যে তখোন অন্য কোথাও বাঁধা পড়ে আছি । পরে আরো একখানা চিরকূট এসেছিলো আপনার দিক থেকে আমার কোনও সাড়া না পেয়ে ।
লেখা তাবাসসুম কি ভুল করে ফেলেছে কিছু ?
এই প্রশ্নেরও কিছু উত্তর ছিলোনা আমার কাছে । জানি, আপনি সেদিন আমাকে দেবযানীর মতো অভিশাপ দিয়েছিলেন । আমার স্ত্রী যে আমাকে ছেড়ে গেছেন , তা কি এই অভিশাপের ফল ? সাহিত্য নিয়ে খানিকটা ঘাটাঘাটি করি বটে, তাই মনটা কোমল , নরম হতেই পারে । তাই বলে এরকম একটা কান্ডে বিশ্বাস করে বসবো এতোখানি অবুঝ হয়েছি কী ? আপনার কি মনে আছে, ভার্সিটির শেষ দিনটিতে সবাই যখোন বিদায় নেয়ার আয়োজনে আড্ডায় মশগুল আপনি বার কয়েক এসে দুর থেকে ঘুরে গেছেন । আপনার চোখমুখের লেখা অতো দুর থেকে আমার পড়া হয়ে ওঠেনি । অনাগ্রহ বলেই কি ? সেটাই বোধহয় আপনার সাথে আমার শেষ দেখা, তাইনা ? আজ এতো বছর পরে মনে হচ্ছে, সেদিন আপনার সামনে গিয়ে আমার কি কিছু বলা উচিত ছিলো ! কে জানে, অনাগ্রহ নয় আপনার প্রসারিত হাতে অপ্রাপ্তির ছোঁয়া বেশি কঠিন হয়ে লাগুক বলেই হয়তো সেদিন কিছু বলা হয়নি !
এতোদিন পরে আপনাকে হঠাৎ দেখে তাই কি ভাবালুতায় পেয়ে বসেছিলো আমাকে ? আপনাকেও কি ? আপনি বোধহয় আগের চেয়েও খানিকটা সুন্দর হয়েছেন । নাকি আমার কবি চোখ আপনাকে সুন্দর দেখছে !
সেদিনের কথা মনে আছে , দ্বিতীয়বার যখোন আপনার বাড়ীতে কবিতার আড্ডা বেশ জমে উঠেছিলো ? আমার কবিতার এই খন্ডটুকু আমি খুব আবেগ দিয়ে আবৃত্তি করছিলুম ?

যে জন দাঁড়ায় এসে অজ্ঞাতে সমুখে
সেদিন তারে দেখি নাই চোখে চোখ রেখে ,
আজ যেন সেই মর্ম মাঝে
দারুন মেঘের মতো
তুলে যায় সুন্দরের তরঙ্গ অপার যতো ।
সেদিনের ভুল আজ ভাসায় দুকূল
রুধিব তারে কি দিয়ে ?

আপনি সবটা সময় ধরে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে তারপরে নামিয়ে নিয়েছিলেন চোখ ? কেন ?
বহুদিন আগের এক চিরকূটে লেখা ভুল শব্দটি সেদিন কি খুব বেজেছিলো আপনার কানে ? আর আমিও কি সেদিনের সেই চিরকূটের জবাব দিতে চাইছিলুম আজ এতোদিন পরে ?

তৃতীয়বার যখোন আবার আপনাদের কবিতা অনুষ্ঠানের নেমন্তন্নে গেলাম তা শেষ হলে বাড়ীর আড্ডাতে আলভী সাহেব জীবনানন্দকে নিয়ে পড়লেন । জীবনানন্দের প্রথম দিককার লেখা রবীন্দ্রনাথকে কেন আকৃষ্ট করেনি তাই নিয়ে আড্ডার শুরু । পরে সবাই জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত অগ্রন্থিত কবিতা নিয়ে কাঁটাচেরা করার ফাঁকে ফাঁকে একলাইন দুলাইন আবৃত্তি করছিলেন তার কবিতা । আলভী সাহেব মনে হয় মনেপ্রানে কবি নইলে এতোবার শোনা বনলতা সেন কবিতাটি তার মুখে এতো মনোরম হয়ে উঠেছিলো যে কখোনও তেমোনটা আর কোথাও যেন শুনিনি । সে কি তার আবৃত্তির গুনে ? নাকি এতোদিন কোথায় ছিলেন... এই লাইনটি কানে বাজছিলো বলে ?
আমি ও তার রেশ ধরে হাযার বছর শুধু খেলা করে কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলুম
...শরীরে ঘুমের ঘ্রান আমাদের ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন:
মনে আছে ? শুধালো সে - বললাম আমি শুধু, বনলতা সেন ।

আপনি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিচ্ছিলেন । আমাকে ও । আপনার হাত সেদিন যেটুকু সময় থাকার কথা , তারও বেশী সময় নিয়ে থমকে ছিলো আমার হাত ছুঁয়ে ।
আপনি কি আমাকে ঠিকঠিক চিনে উঠতে পেরেছিলেন সমস্ত সন্দেহ সরিয়ে ?
আপনি তেমোন কোনও ইঙ্গিত দেননি । আমার দিক থেকেও তাই । এই নিয়ে পাঁচবার আপনার সাথে দেখা । ঘুনাক্ষরেও কেউ কাউকে চিনি কিনা এমোন আকার ইঙ্গিতও আমরা করিনি । জানা হয়নি , একজন তাহসিনা তাবাসসুম কি আজও কারো কথা মনে করে কিনা । কি তাজ্জব তাইনা ?
শুধু মুগ্ধ শ্রোতার মতো আপনি আমার কথা, আমার কবিতা শুনে গেছেন । আপনিও মাঝে মাঝে তাতে কথার ওম ছড়াচ্ছিলেন । গরম ভাতের ধোঁয়া ওঠার মতো উষ্ণতা উড়ছিলো যাতে ।
সেদিন হঠাৎ বানানো কবিতার লাইনের সাথে নতুন লাইন জুড়ে দেয়ার খেলা চলছিলো আলভী সাহেবের সাথে, আন্তক্ষরী খেলার মতো আমার পালা এলে বললুম -
...............খেলার পুতুল ভেঙে সে আবার নতুন পুতুল 
................
চেয়েছিলো এতোদিন চুপিসারে ....... 

আমি এই লাইন দুটি বলতেই আলভী সাহেবের আগেই আপনি বলে উঠেছিলেন -
..............
পৌষের হাটে খুঁজেছে সে তাই বারেবারে
...............
একটি নতুন পুতুল
...............
পুরনোর মতো ভালোবাসা যায় যারে ।

লাইন কটি বলেছিলেন আমার চোখ থেকে আপনার চোখ দুটি না সরিয়েই , চোখে চোখ রেখে । আমার ভেতরে বাইরে পৌষের হাটের মতোই থরে থরে সেজে উঠেছিলো কষ্ট কষ্ট একটা সুখের পশরা ।
কেন এমোনটা বলেছিলেন ? শুধু বোঝাতে যে, তাহসিনা তাবাসসুম এখোনও কারো কথা খুব মনে করে ? আমিও যে আপনাকে একসময় মনে করতুম তা আপনি আজও জানেন না । জানানোর আগেই যে আপনি খসে পড়া তারার মতো মিলিয়ে গেলেন কোথায় যেন ।
তারপর ?
কয়েকবারের আসা যাওয়ার মাঝে আপনার সাথে মন ভিজে যাওয়া সময়গুলো কেটেছে । যার সোয়াদ লেগে ছিলো আপনার ভঙ্গিতেও । গ্রীবা বাঁকিয়ে দৃষ্টিবান ছুঁড়ে দেয়ার ভেতরেও । আমি মজে ছিলুম আপনার সবটুকুতে । বুঝতে পারছিলুম আপনার ভেতর ভেতর ও একটা ঝড় বইছে ।
নইলে ফোন করে জানতে চাইতেন না এবারে আসছেন তো ?
আমি না এলে কি হবে, আমার এমোন প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছেন, না.... আপনি আসবেন কিনা জানলে আপনার পছন্দের খাবারগুলো বানিয়ে রাখতে আমার সুবিধে হতো ।
সে দিনগুলোতে জানতুম, আমার জন্যে একজোড়া প্রতীক্ষার চোখ জেগে থাকবে । যেখানে পৌষের আমন্ত্রন নেই, শরৎয়ের মুগ্ধতা আছে । সে চোখ বলবেনা ডেকে তোমারে চাই । শুধু ডানা ঝাপটাবে অসহায় । এ বুঝি এক অন্যরকম ভালোবাসা । সেই দুই পাখির মতোন
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে
...................................................
......................................................
নিরবে চোখে চোখে চায় ।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে
বুঝাতে নারে আপনায় ।

আপনিও কি সে দিনগুলোতে আমার চোখে জোনাকির জ্বলা নেভা দেখেছেন ? অন্ধকারে অধীর বাতাস বয়ে যায় যেখানে ? দেখে থাকবেন হয়তো । নইলে কাল অতো কাছে এলেন-ই বা কেন ?
ঠোটে ঠোট রেখে নয় , আপনার তর্জনি রেখে কাল রাতে কেনই বা বলবেন - কেউ যদি শুনে থাকে তুমি কী কয়েছো কথা ?

ভালো যেমোন লাগছিলো ভয়ও হচ্ছিলো তেমোন, পাছে কবিতার শুদ্ধতায় স্খলন ঘটে যদি ! আপনাকে ছুঁয়ে দেয়ার তীব্র ইচ্ছেটাকে তাই বুকের পকেটে কড়কড়ে পাঁচটাকার নোটের মতোন ভাজ করে রেখে দিতে হয়েছে সযতনে ।

তাই চলে যাচ্ছি । রেলের কুউউ.. ঝিক..ঝিক শব্দের মতো আপনাকে পিছে ফেলে । আর দেখা হবেনা আমাদের কোথাও , কোনদিন । নতুন কেউ একজন আসবেন হয়তো কবিতা সংঘের আমন্ত্রনে , আমি থাকবোনা সেখানে । কবিতার ছন্দ ছিঁড়ে যেতে পারে এই ভয়ে । শুধু জানবেন না, আপনার আকাশে যেমোন রোদের খেলা তেমনি আমার আকাশেও । এটুকুই থাক শেষের না বলা কথা হয়ে ।
আপনার সেই বহু আগের চিরকূটের লেখাটি-ই আপনাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আজ আমি কি ভুল করে ফেলেছি কিছু ?

আপনার .........


কোন এক রাতবিহারিনীকে

কোন এক রাতবিহারিনীকে (আহমেদ জী এস এর কবিতা)  হায় রে , ফুলি ! কেন পথে নেমে এলি, এ কোন সন্ধ্যাবেলা  চোখে বিষাদের হলুদ কাজল মেখে ...

জ্ঞান কি .... জ্ঞানী কে